মোঃ রয়িসুল সরকার রোমন,স্টাফ রিপোর্টার:
লালমনিরহাটের আদিতমারী সরকারি কলেজের এইচএসসি পরিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক (প্রাক্টিক্যাল) পরীক্ষার নামে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে (বিজ্ঞানে) ৭০০ টাকা ও (মানবিক+ব্যবসায়) ৪০০টাকা হারে আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের।
শুধু আদিতমারী সরকারি কলেজ নয়, লালমনিরহাটের হাতেগোনা কয়েকটি কলেজ ব্যতীত প্রায় প্রতিটি কলেজেই এইচএসসি’র প্রাক্টিক্যাল পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের থেকে অবৈধ অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। তবে হয়রানি, প্রাক্টিক্যালে কম নম্বর ও ফেল করিয়ে দেবার হুমকির কারণে কোনো শিক্ষার্থী বা অভিভাবক নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে অভিযোগ দিচ্ছেন না। কিন্তু তদন্ত সাপেক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে প্রতিকার চাইছেন সবাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী জানান, আমার কৃষিশিক্ষা প্যাকটিকালে টাকা না দেওয়ায় স্যার আমার পরিক্ষার হলে খাতা কেরে নেন এবং বলেন ২০০ টাকা দাও না হলে পরিক্ষা দিতে পারবে না বের হয়ে যাও। তখন আমার কাছে টাকা না থাকায় আমি আমার বান্ধবীর কাছে ১০০ টাকা ধার করে দিলে ও তারা পরিক্ষা দিতে দেয় না পড়ে ২০০ টাকা নিয়েই পরিক্ষা দিতে দেয়। যারা টাকা দেয় নাই তাদের সবার কাছে পরিক্ষার খাতা কেরে নিয়েই টাকা নেওয়া হয়েছে বলে ওই শিক্ষার্থী সহ সবার অভিযোগ ।এদিকে আদিতমারী সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল আজিজার রহমানের বিরুদ্ধে শুধু মাত্র ব্যবহারিক পরিক্ষায় নয়, কলেজের সকল পরিক্ষা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও বিবিধ খরচের নামে অর্থ আদায় সহ কলেজে অনিয়মিত থাকার অভিযোগ রয়েছে।এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ‘আমি কলেজের কাজ নিয়ে সচিবালয়ে আছি। প্রাক্টিক্যালে অতিরিক্ত টাকা আদায়, কলেজে অনিয়মিত থাকা এবং বোর্ড নির্ধারিত অর্থ আদায়ের বিধি নিষেধ সম্পর্কে চানতে চাইলে ফোন বিচ্ছিন্ন করে মোবাইল বন্ধ করে দেন তিনি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, যেসব কেন্দ্রে পরীক্ষা হয় সেখানে কিছু টাকা খরচাপাতি আছে, যারা পরীক্ষা নিতে আসে সেখানেও কিছু কিছু খরচাপাতি আছে। এক্সটারনাল নিয়োগ করতে হয়; তাদেরও টাকা-পয়সা দেয়া লাগে।সেসব খচর তো আর আমরা নিজেদের কাছ থেকে দিতে পারবো না, তাই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে এ টাকা গুলো নেওয়া হয়।তবে অতিরিক্ত ফি আদায় না করতে বোর্ড থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল বলেও স্বীকার করেন তিনি।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে। কেউ টাকা দিতে ঢিলেমি করলে- হয়রানি, প্রাক্টিক্যালে কম নম্বর ও ফেল করিয়ে দেবার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এ কারণে কোনো শিক্ষার্থী বা অভিভাবক অভিযোগ করার সময় নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেননি।প্রত্যেক কলেজের শিক্ষকরাই পরীক্ষার্থীদের থেকে এ অর্থ আদায় করেছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। বিজ্ঞান বিভাগের আদায়কৃত অর্থের কিছু অংশ বাইরে থেকে আগত পরীক্ষক (শিক্ষক) কে কিছুটা দেয়া হয়। বাকি অর্থ কলেজ কর্তৃপক্ষ সহ বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেন বলে শিক্ষকদের এক সূত্র জানিয়েছেন।এদিকে কলেজে এইচএসসির ফরম ফিলাপের সময়ও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হলে শিক্ষার্থীরা আদিতমারী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জি.আর সারোয়ারের কাছে মৌখিক অভিযোগ করে। অভিযোগের পরও শিক্ষার্থীদের গুনতে হয়েছে অতিরিক্ষ ফি। যে কারণে প্রাক্টিক্যাল পরিক্ষা নিয়ে তার কাছে আর কোনো অভিযোগ করেনি বলে জানান শিক্ষার্থীরা।