মোঃ মনিরুল ইসলাম বরগুনা জেলা প্রতিনিধিঃ
১০ লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবীতে,বিয়ের সাড়ে ৮ মাসের ব্যবধানে লাশ হয়ে ফিরছে আমতলীর রিমা ।।
শনিবার বিকালে যৌতুকের নির্মম বলি হয়ে বিয়ের সাড়ে ৮ মাসের ব্যবধানে আমতলী পৌরসভার মন্নান হাওলাদারের কন্যা ইসরাত জাহান রিমার (১৯) লাশ হয়ে বাবার বাড়ি ফিরছে। বিকাল পৌনে ৫টায় লাশবাহী গাড়ী পদ্মা সেতু অতিক্রম করেছে বলে জানা যায়, রাত সাড়ে ৮ নাগাদ হয়ত আমতলীতে পৌছবে। ১০ লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবীতে মেয়েকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ বাবা মন্নান হাওলাদারের। এঘটনা ঘটেছে ৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকার আগারগাওর সংসদ ভবন কর্মচারী কোয়ার্টারের এগারোতলায়।
পরিবার সূএে জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের ৪ নংওয়ার্ডের নিবাসী কাপড় ব্যবসায়ী মো. মন্নান হাওলাদারের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে রিমা বেগমের সাথে কুকুয়া ইউনিয়নের কুকুয়া গ্রামের মৃত হানিফ মোল্লার ছেলে সাদ্দাম হোসেনের সাথে ২০২২ সালের ১৩ জুলাই বিয়ে হয়। সাদ্দাম হোসেন জাতীয় সংসদ ভবনের পরিবহণ শাখার কম্পিউটার অপারেটর। বিয়ের পরপরই ইসরাত জাহান রিমাকে স্বামীর কর্মস্থল সংসদ ভবনের কর্মচারী কোয়ার্টারে নিয়ে যান । কিন্তু বিভিন্ন সময়ে স্বামী ও তার বাসায় থাকা স্বজনরা রিমাকে নির্যাতন করত। বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বামী সাদ্দাম হোসেন রিমার বাবার বাড়ী থেকে ১০ লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলে। রিমা এতে অপারগতা প্রকাশ করলে ওই দিন বিকেলে এবং রাতে স্বামী সাদ্দাম হোসেন শ্বাশুরী আয়েশা বেগম ,ননদ আসমা আক্তার ও ননদের স্বামী মাসুদ গাজী রিমাকে ব্যাপক নির্যাতন করে। শুক্রবার দুপুর ১২ টায় রিমা ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে লাশ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং রিমার বাবাকে আত্মহত্যার খবর জানায়।
রিমার বাবা মন্নান হাওলাদার অভিযোগ করেন, মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় পৌছে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার মেয়ের কপালে কাটা দাগ এবং থুতনি এবং গলায় আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। আমার মেয়েকে ওরা হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। রিমার ভাই রাব্বি হাওলাদার বলেন, আমার বোন আত্মহত্যা করে নাই। ওরা মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে। ওদের করা একটা ভিডিও পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে, আমার বোনের অর্ধেক হাটু খাটের উপর আর গলায় ফ্যানের সাথে ওড়না ঝুলছে। এটা কিভাবে আত্মহত্যা হয়?
শনিবার দুপুরে রিমার আমতলী বাসায় গিয়ে হয়ে দেখা গেছে, এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। স্বজন আর রিমার মা রাজিয়া বেগমের আত্ম চিৎকারে বাতাশ ভারী হয়ে উঠছে। বার বার মেয়ে নাম নিয়ে মা মুর্ছা যাচ্ছেন। প্রতিবেশীরাও কাদছেন।
অভিযুক্ত স্বামী সাদ্দাম হোসেন স্ত্রীকে হত্যার কথা অস্বীকার করে বলেন, সে নিজে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে। তার নিকট কোন যৌতুক চাওয়া হয়নি এবং নির্যাতনও করা হয়নি।
এ ব্যাপারে ঢাকার শের-ই বাংলা নগর থানায় স্বামী সাদ্দাম হোসেন, শ্বাশুরী আয়েশা বেগম, ননদ আসমা আক্তার ও তার স্বামী মাসুদ গাজীকে আসামী করে একটি হত্যা প্ররোচনা মামলা দায়ের করা হয়েছে।শের-ই-বাংলা নগর থানার অফিসার ইন চার্জ উৎপল বড়ুয়া বলেন, রিমার লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামীদের প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদ করা হয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিয়ের মেহেদি শুকাতে না শুকাতে যৌতুকের নির্মম শিকার নুসরাত জাহান রিমা হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবী করেছেন আমতলীর বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ ।