সৈকত জামান প্রিন্স ফুলছড়ি:
ধান,সবজি ,মরিচ ও মাছের মতো উত্তরের জেলা গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ভুট্টা উৎপাদনে ঘটেছে এক নীরব বিপ্লব। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে শস্যটির উৎপাদন বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।এ বিপ্লবের নেপথ্যের নায়ক হলেন দেশের উত্তরাঞ্চলের পরিশ্রমী কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা, কৃষিবিজ্ঞানী এবং ভুট্টার উচ্চফলনশীল হাইব্রিড বীজ বিপণনকারী কোম্পানিগুলো।
চরাঞ্চলের ধু-ধু বালির বুকের দৃশ্য বদলে দিয়েছে ভুট্টা চাষ। ব্রক্ষপুত্র নদের দু-পাড়ের যে দিকে চোখ যাবে সেদিকে দেখা মিলছে ভুট্টা গাছের সবুজসমারোহ। গাছে গাছে সোভা পাচ্ছে সোনালী রংগের ভুট্টুার মোচা। অন্য ফসলের চেয়ে কম খরচে চাষাবাদ করে অধিক লাভ পাওয়ায় এবং বাজারে চাহিদা বেশী থাকায় ভুট্ট্রা চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের চাষীরা। এখন চরাঞ্চল জুড়ে চাষিরা ব্যাস্ত সময় পাড় করছে ভুট্টা মাড়াই, শুকানো ও ঘড়ে তোলার কাজ নিয়ে। ভুট্ট্রা বিক্রি করে শুধু নগদ অর্থ প্রাপ্তিই নয়, ভুট্ট্রা গাছ জ্বালানি ও গো-খাদ্য হিসেবেও চরাঞ্চলের পরিবারে আনছে সাশ্রয়।
ভুট্টা চাষের সুবিধাসমুহ : ১.ভুট্টার চাষের জমিতে আলু ও আমন ধানসহ তিনটি ফসলের চাষ করা যায়। ২. ধান ও গমের চেয়ে উৎপাদন খরচ কম এবং ফলন অনেক বেশি।৩.বাজারে চাহিদা প্রচুর। ৪.তুলনামূলকভাবে অন্য মাঠ ফসলের চেয়ে লাভ বেশি। ৫. ভুট্টার বীজ ছাড়ানো মোচা ও শুকনা গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ৬. আলু তোলার পর ওই জমিতে সামান্য একটি চাষে ও স্বল্প পরিমাণ সার প্রয়োগ করে ভুট্টার চাষ করা যায়। যায়। ৭. ভুট্টা মাড়াই, মোচা থেকে বীজ সংগ্রহ, শুকানোসহ নানা কাজে নারী শ্রমিকরা অংশগ্রহণ করতে পারেন। এতে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ৮. ভুট্টা বিদেশে রফতানিও করা যায়।
বাবার আমলে এই ২৫ বিঘার মধ্যে ১৫ বিঘা জমিতে চাষবাদ করা হলেও পানির অভাবে বছরজুড়ে পড়ে থাকতো অবশিষ্ট ১০ বিঘা জমি। কিন্তু ভুট্টা চাষে তুলনামূলকভাবে পানি সরবরাহ কম লাগে।তাই কাবিলপুর চরে কৃষক মুরশিদ আলী ফেলে রাখা জমিতে শুরু করেন ভুট্টার চাষ। অনান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষে লাভও বেশি।লাভ হওয়ায় ভুট্টা চাষের জমির পরিমাণ বাড়িয়েছেন মুরশিদ আলী । বর্তমানে তিনি বড় ভাই এর
৫ বিঘা জমিসহ মোট ৩০ বিঘা জমিতে ভুটা চাষ করছেন। স্বল্প খরচ ও পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় মুরশিদ আলীর মতো অনেক কৃষকের কাছেই জনপ্রিয় ফসল হয়ে উঠেছে ভুট্টার চাষ। এমনটাই বলছিলেন সফল ভুট্টাচাষী মুরশিদ আলী ।
আমাদের অর্থনীতি কে মুরশিদ আলী আরো বলেন, আজ থেকে এক যুগ আগে আমাদের এলাকায় ভুট্টা চাষ প্রায় করতোই না কৃষকরা। প্রথমে পড়ে থাকা অনাবাদি জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয় ভুট্টার চাষ। স্বল্প খরচে অধিক লাভের মুখ দেখার পর কৃষকেরা এটি চাষে ক্রমশ উৎসাহী হয়ে ওঠেন। এভাবে অপ্রচলিত এই শস্যটির চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কৃষকের কাছে। কৃষকরা যখন দেখলেন অনান্য ফসল আবাদ করে সুবিধাজনক লাভ হয় না, তখন তারা লোকসানি ফসল বাদ দিয়ে শুরু করেন ভুট্টা চাষ। যা এখন বাড়তে বাড়তে কয়েক গুণ। বলা যায় গাইবান্ধা জেলায় ভুট্টা চাষে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে।
জেলায় ভুট্টার ব্যাপক চাষাবাদ ও অন্য ফসলের চেয়ে অধিক উৎপাদন হওয়ায় ভুট্টাকে দেওয়া হয়েছে জেলার ব্রান্ডিং পন্য হিসাবে স্বীকৃতি। চরাঞ্চলের পরিত্যাক্ত জমিতে ভুট্টার চাষ হওয়ায় দিন দিন এ অঞ্চলে ভুট্টা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে, কৃষকদের ভুট্টা চাষে আগ্রহী করতে কৃষি প্রণোদনা, প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষনসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে বলে জানান, সম্প্রসারণ অধিদপ্তর,গাইবান্ধার উপ-পরিচালক,কৃষিবিদ
মো: খোরশেদ আলম । কৃষি বিভাগের তথ্যমতে গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন চরসহ প্রায় ১৭ হাজার ২ শহ হেক্টর জমিতে এবার ভুট্টার চাষ হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় বেশী।
মানুষের খাদ্য হিসেবে ভুট্টা খুব উন্নত মানের। বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকার মেক্সিকো, চিলি, মধ্য আমেরিকা এবং পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকার বহু দেশে ভুট্টা প্রধান খাদ্যশস্য। বাংলাদেশের মানুষও ভুট্টা এখন সেদ্ধ বা পুড়িয়ে খাওয়া শুরু করেছে।রুটি, আটার সঙ্গে মিশিয়ে রুটি, পুরি, ভুট্টার বিস্কুট, ভুট্টার খিচুড়ি, ভুট্টার চাল খিচুড়ি, ভুট্টার পোলাও কতভাবেই না ভুট্টাকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করছে মানুষ। ভুট্টার পপকর্নতো দিনে দিনে শহরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চালের তুলনায় ভুট্টায় আমিষ, ফসফরাস ও চর্বির পরিমাণ থাকে বেশি। ভুট্টাবীজে তেলের পরিমাণ ৬ থেকে ৭ ভাগ। ভোজ্য তেল হিসেবে ভুট্টার তেল উত্তম। এ ছাড়া ভুট্টা স্টার্চ ও সিরাপ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। ভুট্টা থেকে উৎপাদিত ইথানল জৈব জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় অনেক দেশে। তবে একশ্রেণীর মধ্য সত্য ভোগীর দাদনের কবলে স্থানীয় কৃষকের ভুট্টা তাই প্রশ্ন উঠেছে ফশলের সঠিক দাম নিয়ে। পাশাপাশি কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করতে হবে বলে যানান,বাংলাদেশ মানবাধীকার কমিশন ফুলছড়ি উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক আব্দুল কাদের ভুইঁয়া আকাশ