মাসুম বিল্লাহ্, বরগুনাঃ
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সম্পৃক্ততায় বরগুনা ও পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শত শত কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারকচক্র। এমন অভিযোগে ভুক্তভোগী এক ঠিকাদার বরগুনা আদালতে মামলা করেছেন।বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকালে এ বিষয়ে বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রতারণার স্বীকার ওই ঠিকাদার।সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদী ঠিকাদার মাঈনউদ্দিন আসাদ জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলের সিংহভাগ বড় বড় কাজ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বাগিয়ে নিচ্ছে পটুয়াখালী জেলার একটি প্রতারক চক্র।এ বিষয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদ্য বদলি হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব মোঃ নূরুল ইসলাম পান্নাসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অভিযোগ করেও কোনোপ্রকার প্রতিকার পাননি।উপরন্তু প্রভাবশালী ওই প্রতারকচক্রের রোষানলে পরে মিথ্যে মামলার শিকার হয়েছেন তিনিসহ একাধিক ঠিকাদার। ভয়ভীতি ও হুমকীর সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।ভুক্তভোগী ঠিকাদার মাঈনউদ্দিন আসাদ জানান, পটুয়াখালী জেলার মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান হিরু (৪২), নূরে এলাহী আলম ইভান (২৫), মোঃ মিজানুর আলম ওরফে স্বপন মৃধা (৫৫), মোঃ রিয়াজ উদ্দিন (৫৫) সহ তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগী এ প্রতারক চক্রের মূল হোতা।তাদের নিয়ন্ত্রনাধীন ৫টি লাইসেন্স ‘মেসার্স আবুল কালাম আজাদ’, ‘এমডি মিজানুর আলম’, মেসার্স মহিউদ্দিন আহাম্মেদ, (৪) মেসার্স রিয়াজ উদ্দিন এবং (৫) মেসার্স আল মামুন এন্টারপ্রাইজ-এর অনুকূলে বরগুনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিংহভাগ কাজ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে যেমন রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে তেমনি দিন দিন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে স্থানীয় প্রকৃত ঠিকাদারগন।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাঈন উদ্দিন আসাদ উল্লেখ করেন, বর্তমান সময়ে ইজিপি সিস্টেমে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এই সিস্টেমে দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের যাচাই বাছাই-এর ক্ষেত্রে একটি অন্যতম যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয় পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট। এই প্রক্রিয়ায় যার যত বেশি কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট রয়েছে তিনি তত বেশি যোগ্য হিসেবে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকেন।এই চক্রটি নানা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে অসাধু কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদ বানিয়ে বড় বড় কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে।লিখিত বক্তব্যের সময় মাঈনউদ্দিন আসাদ ওই প্রতারক চক্রের দাখিলকৃত বেশ কিছু ভুয়া কাজের সনদ সাংবাদিকদের কাছে দেন।মাঈনউদ্দিন আসাদ তাঁর লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন, শুধু ভুয়া সদনই নয় বিভিন্ন সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালসহ তাদের নামে ভুয়া ইমেইল আইডি খুলে তা ব্যবহার করেও প্রতারণার মাধ্যমে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছে এ চক্রটি।সংবাদ সম্মেলনে মাঈনউদ্দিন আসাদ আরও জানান, প্রভাবশালী এ প্রতারক চক্রের প্রতিটি সদস্যই এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। শত শত কোটি টাকার মালিক। প্রত্যেকেই কোটি টাকার দামি গাড়িতে চলাফিরা করেন। দেশ বিদেশের নামিদামি রিসোর্টে সপরিবারে ঘুরে বেড়ান তারা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই প্রতারক চক্রটি শুধু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজই নিয়ন্ত্রণ করেন না বরং তাঁরা অবৈধ টাকার প্রভাব খাটিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন পটুয়াখালী জেলার রাজনীতিও। তাদের অবৈধ টাকার প্রভাব এবং নানা কুচক্রান্তের কাছে হার মানতে বাধ্য হন সেখানকার ত্যাগী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও।এ চক্রটির অন্যতম হোতা স্বপন মৃধা পটুয়াখালী পৌরসভার সকল ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রিয়াজ মৃধা পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির সভাপতি। তার সিন্ডিকেট বাণিজ্যের কারণে পটুয়াখালী জেলায় দূর পাল্লার কোন পরিবহন ঢুকতে পারে না। এতে পদ্মাসেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার সাধারণ মানুষ।মাঈনউদ্দিন আসাদ জানান, রাষ্ট্রিয় অর্থের নজিরবিহীন এ হরিলুট ঠেকাতে চিহ্নিত এ প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যসহ তাদের সহায়তাকারী পানি উন্নয়ন বোর্ড, বরগুনার দুর্নীতিবাজ উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) মোঃ শাহজালালের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি বরগুনার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত এ অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বরগুনার ডিবি পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।এ বিষয়ে ঠিকাদার মোঃ মিজানুর আলম ওরফে স্বপন মৃধা ও ঠিকাদার নুর এলাহী আলম ইভানের সাথে একাধিক বার মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তারা রিসিভ করেননি।অপর ঠিকাদার মোঃ রিয়াজ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাদেরকে আমি চিনি না, তারাও আমাকে চিনেন না, আমার কোনো কাজ বরগুনা কিংবা পটুয়াখালীতে চলমান নেই। বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত আছি, আপাতত সেখানেই সময় দিচ্ছি। মূলত আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই অফিস কিংবা কোন ঠিকাদার এদের দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে।এ বিষয়ে জানার জন্য বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদ্য বদলীকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নূরুল ইসলাম পান্নার সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি।